Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশে চাষ উপযোগী সম্ভাবনাময়ী বিদেশি ফল অ্যাভোকাডো

বাংলাদেশে যেসব বিদেশি ফল অধুনা চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তার মধ্যে অ্যাভোকাডো অন্যতম। অন্যান্য ফলের তুলনায় এ ফলের মিষ্টতা কম হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অতি উপযোগী। এ ফলের আকার অনেকটা পেয়ারা বা নাশপাতির মতো। একেকটা ফলের ওজন প্রায় ৩০০-৭০০ গ্রাম হয়। ফলের ভেতরে বেশ বড় ডিম্বাকার বীজ থাকে। আহার্য্য অংশ মাখনের মত মসৃণ, হালকা মিষ্টি স্বাদের। একই কারণে অনেকের কাছে এটি মাখন ফল নামে পরিচিত। পেঁপের মতো কাঁচা-পাকা ফল, সবজি, ভর্তা, সালাদ, শরবতসহ ভিন্নতরভাবে খাওয়ার সুবিধা আছে। টোস্টে মাখনের পরিবর্তে অ্যাভোকাডো ক্রিম দিয়ে খাওয়া, সালাদে, স্যান্ডুইচে মেয়নেজের পরিবর্তে অ্যাভোকাডোর ক্রিম দিয়ে আহার করা স্বাস্থ্যসম্মত।


উৎস ও বিস্তার : এ ফলের আদি স্থান মেক্সিকো ও গুয়াতেমালা। পরে এটি আমেরিকা ও ক্যারাবিয়ান দেশগুলোতে বিস্তার ঘটে। যেসব দেশে বেশি অ্যাভোকাডো উৎপন্ন হয় তার মধ্যে মেক্সিকো, চিলি, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, কলম্বো, পেরু, কেনিয়া, ব্রাজিল, রুয়ান্ডা, চীন অন্যতম। অধুনা শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনস, থ্যাইল্যান্ড, ইসরাইল, নেদারল্যান্ডস ও ভারতে এ ফলের চাষের প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ৬০-৭০ জন উৎসাহী চাষি এ ফল সফলভাবে চাষ করছে। তবে তাদের এসব গাছ বীজ থেকে তৈরি এবং অ্যাভোকাডো গাছের সংখ্যা খুব কম, দু-চারটের বেশি নয়। ডিএই আওতাধীন ৫ থেকে ৭টা হর্টিকালচার সেন্টারে রোপিত অ্যাভোকাডো গাছে ফল দেয়া আরম্ভ করেছে। বর্তমানে প্রচুর ফল অনুরাগী অ্যাভোকাডো ফল চাষে অতি আগ্রহী হচ্ছে।


পুষ্টি ও ঔষধিগুণ : অ্যাভোকাডো পুষ্টিতে ভরপুর এবং ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ ফল। ইহা দেহকে সোডিয়াম, সুগার ও কোলস্টেরল মুক্ত রাখে। এ ফল অতি ক্যালোরি সমৃদ্ধ, এতে দেহের জন্য উপকারী ফ্যাট যথেষ্ট রয়েছে, হার্টকে সুস্থ রাখে, ক্যান্সার ও কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। চর্বিতে গলে যায় (Fat soluble) এমন পুষ্টি উপাদন (A, D, K, E) প্রচুর রয়েছে, যা দেহকে সুস্থ রাখতে বুস্টার হিসেবে কাজ করে। শিশুদের সুস্থতা ও বৃদ্ধির জন্য অ্যাভোকাডো ফল আহারের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ফল মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে সুপরিচিত। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিনস ও মিনারেলস এ ফলে প্রচুর রয়েছে। বিশেষ করে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি এতে বেশি। প্রচুর ভিটামিন সি, বি-৬, রিভোফ্লাভিন ছাড়াও দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ফাইবার সমৃদ্ধ। বয়স্কদের মাসল ও হাড় ক্ষয় রোধে এবং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সার রোধক হিসেবে এ ফল কাজ করে। অ্যাভোকাডো আহারে গর্ভবর্তী মায়ের গর্ভপাত রোধ করে, এবং স্বাভাবিক ডেলিভারিতে সহায়ক হয়। মানসিক চাপ, হতাশা দূরীকরণ, ক্ষুধা বৃদ্ধি, সুনিদ্রা নিশ্চিত করা এবং দেহের ক্ষতিকর দ্রব্যাদি প্রস্রাব ও মল আকারে বের হয়ে দেহকে সুস্থ রাখতে এ ফল অতি গুরুত্ব বহন করে।


জলবায়ু ও মাটি : ট্রপিক্যাল, সাব-ট্রপিক্যাল আওতাধীন দেশগুলোতে এ ফল ভালো হয়। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি, আর্দ্র ও গরম আবহাওয়া এ ফল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তবে ফুল ফল ধরাকালে বেশি গরম, শুকনা বাতাস ও ফ্রোস্ট সহনশীলতা এ ফলের কম। শীত শেষে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ১৮০-২৫০ সেন্টিমিটার তাপমাত্রা ফুল ফোটা ও ফল ধরার জন্য বেশি উপযোগী এবং ফল বড় হওয়ার জন্য ২৫০-৩৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে ভালো হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮০০-১২০০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এলাকায় অ্যাভোকাডো ভালো ফলন দেয়। দেশের পার্বত্য জেলাগুলোসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর উঁচু অংশে এ ফল সম্প্রসারণ সম্ভাবনা খুব বেশি।


প্রায় সব ধরনের মাটিতেই অ্যাভোকাডো ফলানো যায়। বিশেষ করে পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত লাল মাটি (বরেন্দ্র এলাকা ও মধুপুর গড়) ও এঁটেল মাটিতেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ ফলের লবণাক্ত সহিষ্ণুগুণ তুলনায় কম। চাষের জন্য সয়েল পিএইচ মাত্রা ৫-৭ বেশি উপযোগী। গাছের জলাবদ্ধ সহনশীল ক্ষমতা নেই। এজন্য পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত, পানির স্তর অপেক্ষাকৃত নিচে (র্৩-র্৪) থাকে, সারা দিন রোদ পায় এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি এ ফল চাষে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। অ্যাভোকাডো চাষের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হতে হবে।


জাত : পৃথিবীতে শতাধিক জাতের অ্যাভোকাডো ফল চাষ করা হয়ে থাকে। জাতগুলোকে তিনটি রেসে বা গোত্রে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো : ক. মেক্সিকান, খ. গুয়াতেমালা এবং গ. ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান প্রজাতি। মেক্সিকান গোত্রীয় ফলের আকার ছোট (২৫০ গ্রাম), ফলের ত্বক পাতলা ও মৃসণ, এ প্রজাতির ফলে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি (৩০%) ও হিম সহনশীল। গুয়াতেমালা গোত্রীয় ফলের আকার বেশ বড় (৬০০ গ্রাম), ফলের বোটা বেশি লম্বা, ফলের ত্বক পুরু এবং অমসৃণ। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান গোত্রীয় ফলের আকার মাঝারি, (৩০০-৪০০ গ্রাম) ফলের উপরিভাগ মসৃণ ও উজ্জ্বল। বাংলাদেশে আবাদের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান রেসের অ্যাভোকাডো চাষের জন্য বেশি উপযোগী। অ্যাভোকাডো উৎপাদনকারী দেশগুলোতে যে সব জাতের আবাদ প্রচলন বেশি সেগুলোর মধ্যে হ্যাস, ফুয়ার্টে, বেকন, রিড, পুলোক, জুটানো, জান, লিন্ডা, নাবাল অন্যতম। পরপরাগায়ন পদ্ধতিতে ফল ধরায় আমের মতো বীজের চারায় নতুন নতুন জাতের সৃষ্টি হয়। তবে মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে না, স্বাভাবিকভাবে ফলন ও ফলের মান কমে যায়।


বংশবিস্তার : বীজ থেকে চারা তৈরি করে যৌন (Asexual) পদ্ধিতে এবং কলম তৈরি করে অঙ্গজ (অংবীঁধষ) পদ্ধতি অবলম্বনে অ্যাভোকাডো গাছের বংশবিস্তার করা হয়। বাংলাদেশে চাষি পর্যায়ে যেসব গাছ রয়েছে সেগুলো সবই বীজ থেকে তৈরি চারার গাছ। ভারতেও বেশির ভাগ অ্যাভোকাডো বীজ থেকে উৎপাদিত।


বীজ থেকে চারা উৎপাদন : পুষ্ট ফলের বীজ সংগ্রহ করে তা থেকে চারা তৈরির জন্য বীজতলায় বীজ বসাতে হয়। বীজ সংগ্রহের পরপরই বীজ বপন করা প্রয়োজন। কেননা সংগৃহীত বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ২-৩ সপ্তাহের বেশি থাকে না। তবে ৫০ সে. তাপমাত্রায় বীজ সংরক্ষণ করা হলে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কয়েক মাস বাড়ানো যায়। বীজতলা বা টবে বীজ বসানোর আগে সমপরিমাণ মাটি, মোটা বালু এবং কোকোডাস্ট মিশ্রিত মিডিয়া তৈরি করে নেয়া উত্তম। বীজ বসানোর আগে বীজের উপরি ভাগের আবরণ সরিয়ে দিলে বীজ বেশি গজায়। এ ফলের বীজ বসানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজের চওড়া ভাগ নিচে থাকে। বসানো বীজের উপরি ভাগ সামান্য পরিমাণ পুরু (২/১ ) মোটা লাল বালু ও কোকোডাস্ট মিশিয়ে ঢেকে দিতে হয়। বসানো বীজের মাটি ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করে নেয়া প্রয়োজন। বীজতলার মাটিতে যেন রসের অভাব না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং নিয়মিত ঝর্ণা দিয়ে হালকা সেচ দিয়ে চারা গজাতে সহায়তা করতে হবে। কাপে বা প্লাস্টিক বোতলের উপরি ভাগ কেটে তাতে পানি দিয়ে বীজ বসানো হলেও বীজ থেকে চারা গজায়। এক্ষেত্রে বীজের ৩০% পানির ওপরে এবং ৭০% পানিতে ডুবানো অবস্থায় বীজ স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যবস্থায় গজানো চারা র্৫র্ -র্৭র্  ইঞ্চি লম্বা হলে তা টবে বা পলি ব্যাগে রোপণ করে বাড়তে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।


কলম তৈরি পদ্ধতিতে : দু-তিন ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চারা গাছ কলম করার জন্য উপযোগী হয়। ক্লেপ্ট, ভিনিয়ার বা সাইড গ্রাফটিং পদ্ধতি অবলম্বনে মূলত কলম তৈরি করা হয় এবং সফলতার হার বাড়ে। সারা বছর ধরে কলম করা যায়। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত কলম করার জন্য বেশি উপযোগী। বাডিং পদ্ধতিতেও অ্যাভোকাডো গাছের বংশবিস্তার করা যায়। সমগোত্রে বা রেসে কলম করলে সফলতার হার বাড়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান রেসের সাথে ম্যাক্সিক্যান রেসের কলম করা যায় না, তবে গুয়াতেমালা ও হাইব্রিড জাতের সায়ন দিয়ে সব প্রজাতির কলম করা যায়।


চারা/কলম রোপণ : বাগান তৈরির জন্য সাধারণত ২০-২৫ ফুট দূরত্বে চারা/কলম রোপণ করা হয়। বাড়ির আঙিনা বা দু-এক সারি গাছ রোপণের জন্য ১৫ থেকে ১৬ ফুট দূরত্ব দিলেই চলে। চা বাগানে আধা ছায়া দেয়ার জন্য অ্যাভোকাডো অতি উপযোগী। তবে এক্ষেত্রে ৩র্০ -৪র্০ ফুট দূরত্ব দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। ফুয়ার্টের  মতো আকারে বেশি বড় ও ঝোপালে জাতের বেলায় অপেক্ষাকৃত বেশি দূরত্বে (৩র্০-৩র্৫ ) রোপণ প্রয়োজন হয়। অ্যাভোকাডো বাগানে মধ্যমেয়াদি মিশ্রফল (সাইট্রাস, পেয়ারা, কুল) বাগান সৃষ্টির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি দূরত্ব (৩র্০-৩র্৫ ফুট) দিতে হয়। গাছ রোপণের আগে ‘লে-আউট’ প্ল্যান তৈরি করে প্রথমে রোপণের নির্ধারিত স্থানগুলো নির্ণয় করে নিয়ে তথায় গর্ত তৈরি করার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি গর্তের মাপ তিন ফুট লম্বা, চওড়া ও গভীর (র্৩দ্ধর্৩দ্ধর্৩) হতে হবে। গর্ত তৈরি শেষে তা ৩-৪ দিন রোদ খাওয়ানো বা গর্তে খড়কুটো ফেলে আগুন দিয়ে পোড়ালে মাটিতে বসবাসরত রোগ-পোকা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। যেসব মিশ্রণ দিয়ে তৈরিকৃত গর্ত ভরাট করতে হবে তা হলো-


(ক) মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড)১৫%, (খ) ৩ নং গ্রেডের ইটের মার্বেল সাইজের ছোট খোয়া ১৫% (গ) নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া (কোকোডাস্ট) ১৫%, (ঘ) উর্বর মাটি ( ভিটেমাটি) ২৫%, (ঙ) পচা গোবর/ আর্বজনা পচা ৩০%
এর সাথে আর মেশাতে হবে হাড়ের গুঁড়া-১ কেজি, ভার্মি কম্পোস্ট ৫ কেজি, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি-৩০০ গ্রাম, জিঙ্ক সালফেট, ম্যাগসালফেট, ফেরাস সালফেট ও বোরন জাতীয় অনুখাদ্য ১০০ গ্রাম করে। এর সবগুলো একত্রে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ১৫ দিন রেখে দেয়ার পর তথায় গাছ রোপণের জন্য উপযোগী হয়। চারা রোপণের আগে তৈরিকৃত মাদায় দু-এক দিন পরপর পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থায় সার মিশ্রিত মাটি গাছ রোপণের জন্য বেশি উপযোগী হবে।


সেচ সুবিধা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে বছরের যে কোন সময় অ্যাভোকাডোর চারা/কলম লাগানো যায়। তবে বর্ষা আরম্ভ হওয়ার আগে এপ্রিল-মে মাসে গাছ রোপণ করা হলে বর্ষা ও শীত আরম্ভের আগে শিকড় দ্রুত ছড়ানোর সুযোগ পায়, প্রতিকূল অবস্থায় গাছ বেড়ে উঠার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ভূমি থেকে ১র্০র্ -১র্২র্  উঁচু করে তৈরি মাদার মধ্যভাগে চারা/কলম রোপণ করলে ভালো হয়। পরাগায়নের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং বেশি ফলন পাওয়ার জন্য সমান সংখ্যক ১:১ অথবা ২:১ অনুপাতে ‘এ’ এবং ‘বি’ গোত্রীয় গাছের চারা রোপণ করতে হয়। গাছ রোপণ করে অবশ্যই গাছকে কাঠি দিয়ে বেঁধে দেয়ার মাধ্যমে ঝড়-বাতাসে গাছ হেলে পড়া রোধ করে সমানভাবে চারদিকে বাড়তে সহায়তা দিতে হবে।


সার প্রয়োগ : গাছের বাড়ন্ত অবস্থায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশ সার ১:১:১ অনুপাতে এবং ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করলে ২:১: ২ অনুপাতে প্রধান এ তিন প্রকার রাসায়নিক সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়। গাছের বয়স ভেদে প্রতি বছর প্রতিটা গাছে যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন হয় তা নিম্নরুপ


প্রতি বছরের জন্য সুপারিশকৃত সারগুলো দু-ভাগে করে নিয়ে একেক ভাগ বছরে কমপক্ষে দুবার প্রয়োগ করতে হয়। এ সারের ৫০% বর্ষার আগে মে-জুন মাসে এবং অপর ৫০% বর্ষা শেষে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গাছে প্রয়োগ করে তা পানি দিয়ে ভালোভাবে ভেজাতে হয়। এছাড়া অনুখাদ্যের অভাব পূরণে প্রতি বছর গাছের বয়স ভেদে ১০০-২০০ গ্রাম করে ম্যাগসালফেট, জিঙ্ক সালফেট, ফেরাস অক্সাইড ও বোরন সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়। মাটির পিএইচ মাত্রা কম হলে ফেরাস সালফেট না দিলেও চলে।


পরাগায়ন অনুকূল ব্যবস্থায় বৃদ্ধিকরণ : ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গাছে আমের মতো মুকুল ধরে, তাতে ২০০-৩০০টা ছোট ছোট ফুলের সমারোহ থাকে। প্রতিটি ক্ষুদ্র ফুল উভয় লিঙ্গিক (Bisexual) হলেও একই গাছের ফুল দিয়ে পরাগায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। তাই পরাগায়ন সুবিধা ও ফলন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাগানে একাধিক গাছ রোপণ করা উচিত। স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফুটার পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন জাতের অ্যাভোকাডোকে দুইভাবে ভাগ করা হয়। (ক) প্রথমটা ‘এ’ টাইপ (হ্যাশ, সিযোন্ড, গুয়াতেমালা, লুলা) (খ) অপর প্রজাতি ‘বি’ টাইপ (বেকন, ফুয়ার্টে, জুটানো, নাবাল) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ‘এ’ টাইপের স্ত্রী অঙ্গ সকাল ৮-১১টা এবং পুরুষ অঙ্গ (পরাগরেণু) পরের দিন বিকেল ৩-৬টায় পরাগায়ন উপযোগী হয়। অপর পক্ষে ‘বি’ টাইপের স্ত্রী অঙ্গ বিকেল ৩-৬টা এবং পুরুষ অঙ্গ পরের দিন সকাল ৮-১১টায় পরাগায়ন উপযোগী হয়। একই কারণে বাগানে এ এবং বি টাইপের গাছ থাকলে পরাগায়নে অসঙ্গতি দুর করে ফল ধরতে সহায়ক হয়।


ট্রেনিং-প্রুনিং : ছোট অবস্থায় ট্রেনিং-প্রুনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ৪-৫ ফুট পর্যন্ত কাণ্ড গঠন করা এবং চার ধারে সমান সংখ্যক ডালপালা ছাড়াতে সহায়ক হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। কোনো জাতের গাছ বেশি উপরের দিকে বাড়ে আবার কোনো প্রজাতি বেশি ঝোপালো এবং ডালপালা ছড়িয়ে নিচে মাটিকে স্পর্শ করে। সময়মতো উপরে বৃদ্ধি রোধ করা এবং অতিরিক্ত ডাল গজালে তা ছেটে কমিয়ে দিয়ে গাছে অবাধে আলো-বাতাস চলাচল সুবিধা নিশ্চিত করা ও ফল ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তবে বেশি মাত্রায় ছাঁটাই করলে ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


সেচ নিষ্কাশন : অ্যাভোকাডো গাছে খুব বেশি সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বেশি প্রয়োজন। তবে শুকনা মৌসুমে ৩-৪ সপ্তাহের ব্যবধানে সেচ দেয়া হলে ফল বেশি ধরে এবং ফলের আকার বড় হয়। শুকনা মৌসুমে অবশ্যই খড়কুটা, শুকনা কচুরিপানা, লতাপাতা গাছের চারধারে র্র্৪র্ -র্৫র্  ইঞ্চি পুরু করে মালচিং দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া উত্তম। এ ব্যবস্থায় মাটিতে রস সংরক্ষিত, আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং পরে এগুলো পচে জৈবসারের উৎস হিসেবে গাছের প্রয়োজন মেটায়।


রোগ ও পোকামাকড় : এ ফল গাছে প্রধানত শিকড় পচা, পাতায় দাগপড়া এবং গোড়া পচা রোগের উপদ্রব মাঝে মাঝে দেখা যায়। বাগানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং বর্ষকালে যেন কোনো মতেই পানি না জমে সে ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে গাছকে নিরাপদ রাখা যায়। এ ছাড়া কপার মিশ্রণে তৈরি ছত্রাকনাশকসহ অন্যান্য উপযোগী ছত্রাকনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে গাছকে সুস্থ রাখা প্রয়োজন। অ্যাভোকাডো গাছে মাইট, মিলিবাগ, স্কেল পোকা ও ফলের মাছি পোকার উপদ্রব মাঝে মাঝে দেখা যায়। এসব পোকার আক্রমণ দেখা গেলে উপযোগী বালাইনাশক স্প্রে করে গাছকে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়া উচিত ।


ফল সংগ্রহ : প্রধানত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পুষ্ট বা পাকা ফল পাওয়া যায়। কচি ফলের রঙ অনেকটা সবুজ থাকে, তবে পুষ্ট হলে বা সংগ্রহ উপযোগী হলে ফলের রঙ পরিবর্তন হয়ে হালকা সবুজ বা কিছুটা ধূসর বা বাদামি রঙ ধারণ করে। এ দেশে ফল পুষ্ট হতে ৫-৬ মাস সময় লাগে, অথচ অন্য দেশগুলোতে অ্যাভোকাডো ফল পাকতে ৮-১০ মাস সময় লাগে। অন্য ফলের ন্যায় গাছে ফল পেকে ঝরে পড়ে না। পুষ্ট ফল পেড়ে ঘরে ৫-৭ দিন রাখলে ফল নরম হয়ে আহার উপযোগী হয়। এ ফল দীর্ঘদিন গাছে রাখার সুবিধা আছে। পুষ্ট ফল এক দেড় মাস পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে গাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়। গাছের বয়স ও জাত ভেদে প্রতি গাছ থেকে ২০০ থেকে ৫০০টা ফল পাওয়া যায়। এক থোকায় বা বোঁটায় ১-৪টার বেশি ফল ধরে না। কোনো কোনো গাছে অসময়ে ফুল-ফল আসতে দেখা যাায়। সংগৃহীত ফল ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হলে ১-২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।


বাংলাদেশে অ্যাভোকাডো সম্প্রসারণে অতি উপযোগী হওয়ায় পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ফলের উপযোগী জাত চিহ্নিত করে তা বিস্তারে সংশ্লিষ্ট সবার অবদান রাখা একান্ত প্রয়োজন।

 

এম. এনামুল হক

মহাপরিচালক (অব.), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং সদস্য, বিশেষজ্ঞ পুল (APA), কৃষি মন্ত্রণালয়, মোবা : ০১৯১৭০৫৫২০৫


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon